৬ই জুলাই ২০২৪ তারিখ বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন এর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের রপ্তানির বিপরীতে প্রনোদনা/নগদ সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে জারীকৃত সার্কুলারের প্রতিক্রিয়ায় ৬ই জুলাই ২০২৪, শনিবার দুপুর ১২ টায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ’র সম্মানিত প্রেসিডেন্ট জনাব মোহাম্মদ আলী খোকন সভাপতিত্ব করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বিটিএমএ সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন………
দেশের অর্থনীতিতে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল সেক্টরের অবদান অপরসিীম, কিন্তু দুঃখের বিষয় এ সেক্টরটি বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্বালানি সংকটের জন্য স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না । বিগত কয়েক মাস যাবত তীব্র গ্যাস সংকটের কারনে মিলগুলি তাদের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০-৫০% এর বেশী ব্যবহার করতে পারছে না । ফলশ্রুতিতে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুন হওয়ায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করছে যার প্রভাব তৈরী পোশাক রপ্তানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে । টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্বি পাওয়ায় আমাদের স্থানীয় বাজারও বিদেশীদের হাতে চলে যাচ্ছে।
বর্তমানে টেক্সটাইল শিল্প যে বিষয়গুলিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছি তা হলঃ
১. গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের সংকট এবং প্রায় ২৫০% মূল্য বৃদ্ধি
২. ইডিএফ ফান্ডের পরিমাণ ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ২০ মিলিয়ন ডলার করন এবং অধিকাংশ ব্যাংকের এই ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যায়েও অনীহা
৩. ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৪.৫% হওয়া যা পূর্বের তুলনায় ৪৮-৬৬% বৃদ্ধি পেয়েছে
৪. শ্রমিক মজুরী ৭০% বৃদ্ধি এবং
৫. ডলার সংকটের কারনে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের প্রায় ৪০% ঘাটতি এবং তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতে ব্যাংকের অনীহা উল্লেখযোগ্য।
গত ৩০ জুন ২০২৪ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের রপ্তানির বিপরীতে প্রনোদনা/নগদ সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত এফ.ই সার্কুলার নং ১২ জারি করেছে । সার্কুলারটিতে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টরের জন্য ক্রম ১ থেকে ৫ পর্যন্ত আইটেম সমূহে (যার সবগুলোই বিটিএমএ সদস্য অর্থাৎ প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টর কর্তৃক উৎপাদিত পণ্য) রপ্তানির বিপরীতে প্রনোদনা/নগদ সহায়তার পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করে জারী করা হয়েছে। ফলে এ শিল্প মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে এবং এ শিল্পের অগ্রযাত্রা থেমে যাবে এবং ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পাট শিল্পের মতো বিলুপ্ত হতে পারে ।
আমরা জানতে পেরেছি নভেম্বর ২০২৬ এর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কথা বলে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে কিন্তু এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের এখনো প্রায় আড়াই বছর বাকী এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলেও গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শিল্পখাত সমুহ নগদ প্রনোদনা পেতে পারে । আমাদের প্বার্শবর্তী দেশ ভারত ২০০৪ সালে এলডিসি হতে গ্র্যাজুয়েট হলেও অদ্যাবধি তাদের টেক্সটাইল সেক্টরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নগদ সহায়তার বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে আসছে । যেকোন শিল্পের শক্তিশালী বা টেকসই করার জন্য নীতি সহায়তা বা প্রণোদনা আবশ্যিক যা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও দিয়ে আসছে । যে কোন দেশের জন্যই টেকসই শিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন শক্তিশালী নীতিসহায়তা ও প্রণোদনা । আমাদের দেশে কোন ধরণের বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে নগদ প্রণোদনা যেভাবে কমানো হয়েছে তাতে টেক্সটাইল সেক্টরে আমাদের সক্ষমতা কমবে। এর প্রভাবে ক্রমান্বয়ে এই সেক্টরের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুকিতে পড়বে এবং প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের সাথে আমরা কোনভাবেই টিকতে পারবো না । কোন কারণে প্রাইমারী টেক্সটাইল বন্ধ হলে পরবর্তীতে তৈরি পোশাক শিল্পও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ধস নামার আশংকা তৈরি হবে। উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যেই টেক্সটাইল সেক্টরের বেশ কিছু মিল বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরো অনেক মিল যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে । এমতাবস্থায়, অনতিবিলম্বে ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারীকৃত এফ.ই সার্কুলার নং ১২ প্রত্যাহার করে নগদ প্রণোদনা পূর্বের অবস্থায় আনা সহ দ্রুত সময়ের মধ্যে টেক্সটাইল শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগী “টেক্সটাইল পলিসি” প্রণয়ন এবং ব্যাংক লোন পরিশোধের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড প্রদানের জোর দাবী জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

error: Content is protected !!